দা ইমিটিশন গেম
Last updated
Last updated
Q: Add 34957 to 70764.
A: (Pause about 30 seconds and then give as answer) 105621.
দেখুন তো যোগফলটা ঠিক আছে কি না? বলে দিচ্ছি। উত্তর হওয়ার কথা 105721.
কিন্তু মেশিন উত্তর দিয়েছে 105621
কি ভাবছেন মনে মনে - এ আর এমনকি ? LLM এবং AI মডেলগুলো তো হর হামেশা হামেশা এরকম ভুল করেই থাকে। কিন্তু যদি আমি বলি এই ভুল খুব বিখ্যাত একটি ভুল ?এই ভুল এমন একজন ম্যাথমেটিশিয়ান করেছেন যিনি আজকে থেকে প্রায় ৭৫ বছর আগে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন - মেশিন চিন্তা করতে পারে, তাহলে ?
হ্যা আমি এলান টিউরিং এর কথা বলছি
এলান টিউরিং, টিউরিং কে ছিলেন ? একটি লাইন দিয়ে বলি - ২০২৪ সালে বা সামনে আরো কতগুলো বছর আমরা AI, LLM model, মেশিন লার্নিং ইত্যাদি বড়ো বড়ো যত টার্মিনোলজি শুনছি বা শুনবো- এর অনেক কিছুই এলান টিউরিং আজ থেকে প্রায় ৭৫ বছর আগে কিছুটা ধারণা আমাদের দিয়ে গিয়েছিলেন।
চোখ কপালে উঠেছিল আমারও, কিন্তু পরে বুঝে নিয়েছি কেন এতবড়ো একজন গণিতবিদ এর প্রস্তাবনায় এই ভুলটি হয়েছে। জানাবো,এটকু অপেক্ষা করুন ।
অ্যালেন টিউরিং এর একটি বিখ্যাত উক্তি আছে :
If a machine can think, it might think more intelligently than we do, and then where should we be
সহজ বাংলা অর্থ হচ্ছে যদি কোনো যন্ত্র চিন্তা করতে পারে, তাহলে হয়তো আমাদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমানের মতো চিন্তা করবে। তখন আমাদের অবস্থা কী হবে? কি পাঠক কখনো ভেবেছেন কি এই প্রশ্নের উত্তর ?
টুরিং টেস্ট সম্পর্কে: বিখ্যাত টিউরিং টেস্ট এর কথা কারো অজানা না। টিউরিং বিশ্বাস করতেন মেশিন চিন্তা করতে পারে। সেই চিন্তাধারা থেকেই উনি টিউরিং টেস্ট এর প্রস্তাবনা দেন। টেস্ট এর কনসেপ্ট টা অনেকটাই এরকম : ধরুন, আপনি একটি ঘরে বসে আছেন। আপনার সামনে দুটি মানুষ বা যন্ত্র রয়েছে, কিন্তু আপনি তাদের দেখতে পাচ্ছেন না। আপনার কাজ হচ্ছে প্রশ্ন করে বের করা, কে আসল মানুষ আর কে যন্ত্র।যন্ত্রটি যদি এমনভাবে উত্তর দিতে পারে যে আপনি বুঝতেই না পারেন সেটি যন্ত্র, তাহলে বলা হবে যন্ত্রটি "বুদ্ধিমান"। সোজা ভাবে বলতে গেলে এটি এমন একটি পরীক্ষা, যেখানে দেখা হয়, যন্ত্র মানুষকে ফাঁকি দিয়ে এমন কথা বলতে পারে কি না- যে আমরা ভাবতে বাধ্য হই, সে আসলে মানুষ। তার লিখিত প্রবন্ধটির লিংক কমেন্টে দিয়ে দিচ্ছি।বলে রাখি,অন্নান্ন টেস্ট এর মতো টিউরিং টেস্ট এর ও ক্রিটিক আছে।
ভুলটা আসলে কে করলো, মানুষ নাকি যন্ত্র : লেখা শুরু করেছিলাম টিউরিং এর প্রস্তাবনায়- মেশিন এর ভুল উত্তর দেওয়ার একটি বিষয় কে চিন্তা করে। কেন টিউরিং টেস্ট এর এই মেশিন এত বিখ্যাত গণিতবিদ এর ব্রেন চাইল্ড হওয়ার পরেও এই সামান্য যোগ এর ভুলটা করলো ?
ধরুন টিউরিং টেস্ট এর সেই মানুষটি যার সামনে দুটি মানুষ বা দুটি যন্ত্র, যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, সেই মানুষটি আপনি। আপনাকে বের করতে হবে আপনি মেশিন নাকি মানুষের সাথে কথা বলছেন, আপনি কি করবেন? যদি আপনি একজন careful reader হয়ে থাকেন,ওপাশ থেকে আসা (মানুষ বা যন্ত্রের রিপ্লাইগুলো )যাদের আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, প্রতিটি দাড়ি, কমা, ফুলস্টপ ভালো করে পড়বেন। পড়তে গিয়ে দেখলেন যোগে ভুল।
আপনার মনে চিন্তা আসলো - মেশিন কি ভুল করতে পারে ?মানুষ -ই ভুল করে, তাহলে আমি মানুষের সাথেই কথা বলছি। সুতরাং আমাকে যে রিপ্লাই দিচ্ছে - সে মানুষ না হয়েই যায় না ! ফলাফল - মেশিন উৎরে গেলো টুরিং টেস্টে। আমার ধারণা - টিউরিং একজন তুখোড় গণিতবিদ ছিলেন। এই ভুলটি করার সুযোগ উনি মেশিনের মাঝে ইচ্ছাকৃতভাবেই রেখেছিলেন যাতে করে - টিউরিং টেস্ট এ মেশিন এর ভুলের ব্যাপারটি - যে কথা শুনছে তার কাছে মানুষের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট মনে হয়।
ট্রিক টা কোথায় ধরতে পেরেছেন ?
পেপারটির পৃষ্ঠা ১৩ তে টিউরিং নিজেই বলেছেন তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করেছেন : It is claimed that the interrogator could distinguish the machine from the man simply by setting them a number of problems in arithmetic. The machine would be unmasked because of its deadly accuracy. The reply to this is simple. The machine (programmed for playing the game) would not attempt to give the right answers to the arithmetic problems. It would deliberately introduce mistakes in a manner calculated to confuse the interrogator. যার বাংলা করলে দাঁড়ায় : অনেকে বলে যে প্রশ্নকারী সহজে যন্ত্রটাকে মানুষের থেকে আলাদা করতে পারবে যদি তাদেরকে কিছু গণিতের সমস্যা দেয়। যন্ত্রটা ধরা পড়ে যাবে, কারণ সেটা সবসময় একদম ঠিক উত্তর দেবে। কিন্তু এর উত্তরে সহজ কথা বলা যায়। যন্ত্রটা (যেটাকে খেলাটা খেলার জন্য প্রোগ্রাম করা হয়েছে) ইচ্ছে করে ঠিক উত্তর না দিয়ে ভুল করবে, যাতে প্রশ্নকারী বিভ্রান্ত হয়ে যায়।
এই লেখা যখন লিখছি তখন ডেইলি মেইল এর একটি রিপোর্ট আমার সামনে। রিপোর্টের তথ্য অনুসারে চ্যাট জিপিটি টুরিং টেস্টে পাস করেছে। রিসার্চের একটা ছোট সামারি যদি বলি তাহলে পুরো ব্যাপারটা দাঁড়ায় এরকম : ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সান ডিয়েগোর বিজ্ঞানীরা চ্যাটজিপিটি 4.0 মডেলসহ বিভিন্ন এআই মডেলের পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় ৫০০ জন অংশগ্রহণকারীকে ৩টি এআই (চ্যাটজিপিটি-৪, চ্যাটজিপিটি-৩.৫ এবং এলিজা) ও একজন মানুষের সঙ্গে আলাপের সুযোগ দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারীদের কাজ ছিল পাঁচ মিনিটের আলাপের মাধ্যমে এআই এবং মানুষকে চিনে নেওয়া। ফলাফলে দেখা যায়, এলিজাকে ২২%, চ্যাটজিপিটি-৩.৫ কে ৫০%, এবং চ্যাটজিপিটি-৪ কে ৫৪% ক্ষেত্রে, মানুষ বলে মনে করা হয়েছিল। অন্যদিকে, প্রকৃত মানুষকে ৬৭% ক্ষেত্রে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
তাহলে বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারে টিউরিং এর দর্শন কি ছিল ? তিনি মনে করতেন The concept of intelligence is 'emotional rather than mathematical অনেকভাবে সেটি ব্যাখ্যা করা যায়, কিন্তু সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যাখ্যাটি মনে হয় টিউরিং নিজেই দিয়ে গিয়েছেন। তার দৃষ্টিতে একটি মেশিন বুদ্ধিমান কি না, সেটি যতটা না তার কার্যক্রম এবং way of response এর উপরে নির্ভর করে তার থেকেও বেশি এখানে গুরুত্বপূর্ণ আমরা মানুষেরা সেটিকে কিভাবে দেখি বা আমাদের চিন্তাভাবনাকে সেই কার্যক্রম এবং way of response কতটা প্রভাবিত করে।
শেষ করবো টিউরিং এর একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়ে : A computer would deserve to be called intelligent if it could deceive a human into believing that it was human যার বাংলা করে দাঁড়ায় একটি কম্পিউটারকে তখনই বুদ্ধিমান বলা যেতে পারে, যদি এটি একজন মানুষকে ভুল ধারণা দিতে পারে যে এটি আসলেই একজন মানুষ।
লিখতে চেয়েছিলাম সোশ্যাল মিডিয়ার এনালিটিক্স, দ্বিতীয় পর্ব, লিখে ফেললাম টিউরিং কে নিয়ে। টুইরিং যুদ্ধাস্ত্র হাতে নিয়ে মানুষ মারেননি ঠিক কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস এর সাথে এই ম্যাথমেটিশিয়ান এর একটা বড়ো ভূমিকা আছে। জানতে চাইলে এবং লেখা পরে যদি টিউরিং কে নিয়ে মুভি টা দেখতে চান - দেখতে পারেন The Imitation Game
নিচে টিউরিং এর পেপার এর একটি লিংক সংযুক্ত করে দিলাম
If a machine is expected to be infallible, it cannot also be intelligent
যদি একটি যন্ত্রকে ত্রুটিহীন হওয়ার আশা করা হয়, তবে এটি বুদ্ধিমানও হতে পারে না।